যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা যারা একাধিক কাজে যুক্ত সম্প্রতি তাদেরকে করা এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন একসঙ্গে কয়েকটি চাকরী করার চেয়েও শিশু লালন পালন বেশী পরিশ্রমের। এই তথ্য পৃথিবীর প্রায় সব অভিভাবকদের বেলাতেই প্রযোজ্য। কেননা সন্তান পালনে আমাদেরকে যে পরিমাণ মানসিক চাপ নিতে হয় তা এক কথায় অতুলনীয়। নিজের প্রতি যথেষ্ট যত্ন না নিতে পারায় মায়েরা হয়ে পড়ে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। বিরতিহীন এই কাজের চাপে বাবা মা মাঝে মাঝেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন, যেটা খুবই স্বাভাবিক। আবার অন্যদিকে শিশুর সঙ্গে অনবরত হইচইয়ের ফলে শিশু মনেও একটা প্রভাব পরে। যা আমরা চাইনা। শিশু হয়ে উঠে খিটখিটে স্বভাবের, আত্মবিশ্বাসের অভাব সহ প্রায় সব কিছুতেই অসহযোগিতা করার মানসিকতা গড়ে উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় অনেক বাবা মাকেই দেখা যায় না পেড়ে একসময় হাল ছেড়ে দেন। ততোদিনে শিশুও বড়দের দুর্বলতাগুলো বুঝে ফেলে, কখন কোন অবস্থায় বায়না ধরতে হয় সেটা শিখে ফেলে। এবং একবার অনিয়ন্ত্রিত জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে শিশুর পক্ষে ভালো অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে বেশ বেগ পেতে হয়।
জ্যান্টাল পেরেন্টিং আমরা প্রায়ই একটা প্রশ্ন পেয়ে থাকি যে, জ্যান্টাল পেরেন্টিং মানে কী শিশু যা ইচ্ছে তাই করতে দিব? ব্যাপারটা কিন্তু তা না। আপনি শিশুকে ভালবাসবেন এটা খুবই স্বাভাবিক। প্রায় সব সংস্কৃতিতেই শিশুকে আদরে বড় করা হয়। কিন্তু শিশুর ক্ষেত্রে যা কিছু আপনি নিষিদ্ধ করছেন সেটাও আপনাকে হাসিমুখেই করতে হবে। এটা খুবই কষ্টকর কিন্তু ভীষণ উপকারী একটি পদ্ধতি। প্রতিদিন শিশুকে যতটা কম 'না' বলা যায় ততোই ভালো। আর যেসব ক্ষেত্রে আপনি 'না' বলেন সেটা যেন খুব ভালো ভাবে মানা হয়, 'না' টা যেন মাঝে মাঝে আবার 'হ্যা' না হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিৎ শিশুর চারপাশকে এমনভাবে সাজানো যেখানে তাকে খুব কম 'না' শুনতে হয়। আপনাকে খুব শান্ত কিন্তু কঠোরভাবেই 'না' বলতে হবে। কিন্তু আমরা যখন হাল ছেড়ে দেই তখন শিশু সেটা বুঝতে পারে, ফলে পরবর্তীতে এই কৌশল বার বার প্রয়োগ করতে চায়। তাই শিশুকে এটা বোঝানো জরুরী যে (১) তুমি কাঁদলেও আমরা এটা দিতে পারছি না। এতে শিশু আমাদের বুঝতে পারে এবং নিয়মটাও জানতে পারে। কিন্তু যখন আমরা খারাপ আচরণ করে নিষেধ করি তখন শিশু আসলে আমাদেরকেই প্রতিপক্ষ হিসেবে নেয়, এবং নানাভাবে আমাদের দিয়ে নিয়মটা ভাঙ্গাতে চায়।গবেষণায় দেখা যায় যে ৩ বছরের মধ্যে শিশুকে কিছু নিয়ম স্পষ্ট করে বোঝানো গেলে বাকী বছরগুলোতে বাবা মায়ের ঝামেলা অনেক কমে যায়। এটা কেন হয়? জন্মের পর আমাদের মস্তিষ্কে প্রতি সেকেন্ডে দশ লক্ষ্য নিউরন পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে, সে হিসেবে প্রথম এক হাজার দিনেই আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৯৫ ভাগ গঠিত হয়ে যায়। এই অভাবনীয় ঘটনা ঘটার সময় শিশু খুব দ্রুত শিখতে থাকে, অন্যভাবে বললে মস্তিষ্ক চারপাশ থেকে তথ্য নিতে থাকে। যদিও শিশু যে শিখছে এটা আমরা সাধারণ মানুষ বুঝি অনেক দেরীতে, বিশেষ করে শিশু যখন কমিউনিকেশন্স বা যোগাযোগ করার দক্ষতা অর্জন করে তখন বুঝতে পারি। তাই একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্য দিয়ে শিশুকে ওই এক হাজার দিন পার করলে অনেক ভালো অভ্যাস শিশুর মধ্যে অনেক দিন পর্যন্ত থেকে যায়। মূল কথা হচ্ছে ভালোবাসার সঙ্গে শিশুকে এই ধারনাটা দেওয়া জরুরী যে, আমরা সবাই আনন্দ করবো কিন্তু আমাদের কিছু বিষয় মেনে চলতে হয়, শিশুকে খারাপ ভাবে শাসন না করেও আমরা সেটা বলতে পারি- (২) তুমি কাঁদছো কিন্তু শুধু কথা বলেই আমরা বুঝতে পারি, তোমার রাগ বা কান্না কোন কিছু কমুউনিকেশন্স করে না এবং (৩) হাসিমুখকে আমরা সবাই ভালবাসি।
1 Comment
|
অন্যান্য BabuiTipশিশুর সঙ্গে ঘরের কাজ নতুন BabuiTipআরও পড়ুন- |