ঘরে শিশু থাকলে বাবা মায়ের পক্ষে প্রতিদিনের গৃহস্থালি কাজকর্ম করা বেশ ঝামেলার একটা ব্যাপার। সম্ভবত ঘরের কাজের সামাল দেওয়া নিয়েই তাদের সব চেয়ে বেশি চিন্তা করতে হয়। এই করোনা কালেতো বাড়ির কাজের সঙ্গে শিশুর পরিচর্যাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের যেটা কাজ শিশুর কাছে সেটা কিন্তু খেলা, আর খেলতে খেলতেই শিশু শিখতে থাকে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব দক্ষতা। আমাদের কাজগুলিতে কীভাবে বাবুইকে সম্পৃক্ত করা যায় তা নিয়ে আগেভাগেই ভেবে রাখুন। এটা যে তাকে শুধু ব্যস্ত রাখবে তাই নয়, এটা হোক তার শিক্ষার পাঠ্যক্রমের অংশ। সম্প্রতি মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ছাত্রছাত্রীদের উপর এক জরিপ করে দেখেছে যারা খুব ছোট বেলাতেই বাবা মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ করতো তারা অন্যদের তুলনায় প্রায় ১৬ ভাগ বেশি সমস্যা সমাধানে, পারস্পরিক সম্পর্ক ধারণে পারদর্শী। এমনকি মূল্যবোধের কারনে তাদের মাঝে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার হাড়ও অনেক কম। অবশ্য এই গবেষণার বেশ আগে থেকেই আমরা বিভিন্ন কির্তিমান ব্যক্তি যেমন দ্য ভিঞ্চি থেকে শুরু করে হালের বিল গেটসের জীবন পর্যালোচনা করে দেখি যে ব্যক্তি জীবনে তারা ঘরের কাজে বেশ পারদর্শী এবং খুব ছোটবেলাতেই বাবা মায়ের সঙ্গে তারা বিভিন্ন কাজ করত।
কীভাবে শুরু করা যায়- প্রতিদিনের রুটিন ডঃ মেন্ডেলের মতে রুটিন হচ্ছে শিশু শিক্ষার প্রধান উপকরণ। রুটিন অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে শিশু আসলে একটা মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ পায়। শিশু বুঝতে পারে সামনে কখন কী আসছে। তাই বাড়ির কাজ তার দৈনন্দিন রুটিনের অংশ করে নিন। শুরুটা হতে পারে খাওয়ার টেবিল গোছানো বা ময়লা জামাকাপড় নির্দিষ্ট ঝুড়িতে রাখার মতো ছোট বিষয়গুলো দিয়েই। বিকেলে টবের গাছে পানি দেওয়া বা বাজারের সদাই ঠিক জায়গায় রাখার মতো কাজগুলো আমারা তুচ্ছ জ্ঞান করলেও শিশুর জন্য হতে পারে আনন্দময় অভিজ্ঞতা। কাজের ভগ্নাংশ ডঃ মেন্ডেল মনে করেন লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে একাগ্রতার দরকার হয় তা আমাদের শিশুদের মাঝে অনুপস্থিত এবংএটা খুবই স্বাভাবিক। ছোট ছোট অর্জনের মধ্য দিয়ে আমরা শিশুকে একটা বড় অর্জনের জন্য উৎসাহিত করতে পারি। যেমন ধরুন 'তোমার ঘর পরিষ্কার করো' এই কথাটা শিশুকে কোন পরিষ্কার বার্তা দেয় না। তারচেয়ে বলতে পারি 'খেলার জন্য আমাদের আরেকটু জায়গার দরকার, তুমি তোমার পুতুলগুলি শেল্ফে উঠিয়ে রাখো, বা বইগুলি নিচে পড়ে থাকলে হারিয়ে যেতে পারে, এগুলো তুলে রাখো'। একই ভাবে সপ্তাহে একদিন 'তুমি তোমার বিছানার চাদরটা টান টান করে বিছিয়ে রাখবে'। এর সাথে পরেরবার বালিশটাও মাথার দিকে সমান ভাবে রাখতে দিয়ে আপনি আসলে বাবুইকে বিছানা গোছানোই শেখাচ্ছেন। দক্ষতা অর্জনে মনোযোগ দিন চাইল্ড মাইন্ড ইন্সটিটিউটের প্রধান ডঃ স্টেফানি লি দক্ষতা হিসেবে ঘরের কাজের মূল্যায়ন করাকে সবচেয়ে জোর দেন । তিনি বলেন স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই প্রতিটি শিশুর জানা উচিৎ কীভাবে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে হয়। তাহলে তার জীবন গোছানোর জন্য অন্যের সাহায্যের দরকার হবে না, শিশু বুঝবে কীভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে শিখতে হয় আর তার পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়। পড়া আর খেলার সময় যে আলাদা করে নিতে হয় সে শিক্ষা তাকে আলাদা করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, সেটা তার নিত্যদিনের অভ্যাসেই বলে দিবে। কাজের পুরস্কার কাজগুলোকে দায়িত্ব না বলে পুরস্কার লাভের শর্ত হিসেবে পরিচিত করুন। ডেজার্টে মিষ্টি কিছু খাওয়ার আগে যেমন আমাদের মূল খাবারটা শেষ করতে হয় তেমনি নতুন খেলা শুরু করার আগে খেলার জায়গাটার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঘর গোছাতেই হয়, অথবা সকালে স্কুলের আগে তাড়াহুড়া না করে একটু বেশি ঘুমাতে চাইলে আগের রাতেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ। মজার ব্যপার হচ্ছে শিশু যখন কাজের যৌক্তিকতা বুঝতে পারে তখন সে সহযোগীতা করে তবে বেশীরভাগ সময়ই আমরা তাদেরকে কাজটার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিতে পারিনা। যৌক্তিক পরিণতি পুরস্কারের চেয়ে কার্যকরী পন্থা হচ্ছে কোন কিছুর যৌক্তিক পরিণতি বাবুইর কাছে তুলে ধরা। এটা শুধু কাজ না শিশুকে তার পুরো জীবনের প্রতি একটি স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মনে করুন শিশু হাত থেকে দুধের গ্লাস ফেলে দিয়েছে। 'দেখো এ জন্যই তোমাকে বলি সব সময় দুই হাতে গ্লাস ধরতে, তুমি হয়তো বড়দের মতো করে এক হাতে ধরতে চাও কিন্তু দেখো আমার আঙ্গুল কত বড় আমি কিন্তু সহজেই এটা পারছি যেটা তুমি পারছ না'। অথবা 'তুমি হাত না ধুলে জীবাণু খাবারের সঙ্গে তোমার পেটে চলে যায় আর তোমার পেট ব্যাথা করে'। কিংবা 'তুমি তৈরি না হলেতো বেড়াতে যেতে দেরী হবে এতে তোমার বেড়ানোর সময়টাও কমে যাবে'। 'এটা করোনা', 'ওটা করো' বলাতে শিশু কেন কিছু করবে আর কিছু করবে না তার যৌক্তিকতা খুজে পায় না আর এর পরিণতিটাও দেখতে পায় না। আমাদের আচরণে যৌক্তিকতা তখনই আসে যখন আমরা পরিণতিটা সহজেই বুঝতে পারি। প্রকল্প ভিত্তিক 'আজ আমরা সিঁড়ি পরিষ্কার করব, তুমি যদি আমাকে সাহায্য করতে চাও তাহলে আসো দুজনে শুরু করি'। মাঝে মাঝেই শিশুকে হটাৎ কোন প্রজেক্টে বা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে নিন, বুঝিয়ে দিন তার দায়িত্ব কী। এতে শিশু প্রতিদিনকার কাজের একঘেয়েমি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে, শিশু আনন্দের মধ্য দিয়ে শিখতে পারবে। এভাবেই আমরা প্রতিদিন ঘরের ছোট ছোট কাজের মধ্য দিয়ে শিশুকে আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিয়মানুবর্তিতা আর পরিশ্রমী হতে সাহায্য করতে পারি। আর এর প্রতিফলন শিশু তার স্কুলে এবং ব্যক্তি জীবনেও দেখতে পাবে। #BabuiTip * তথ্যসূত্র- https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/30507727/
0 Comments
|
অন্যান্য BabuiTipশিশুর সঙ্গে ঘরের কাজ নতুন BabuiTipআরও পড়ুন- |