​শিশুর আত্মবিশ্বাস আর দক্ষতায় নিয়মিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চর্চা

আমরা জ্ঞান লাভ করি অভিজ্ঞতা থেকে আর অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয় অনেকগুলো ভুল সিদ্ধান্ত থেকে। সিদ্ধান্ত নেয়াটা নিয়মিত হলে আমরা এক সময় অভিজ্ঞ হই এবং বুঝতে পারি কিভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই শিশুকে শুধুমাত্র কিভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় বললেই শিশু তা নিতে পারে না, তার চর্চার প্রয়োজন হয়। শিশুর বেশ কিছু সিদ্ধান্ত সাধারণত আমরা নিজেরা নিয়ে থাকি -
শীতে শিশুর গরম কাপড় গায়ে দেওয়া, ঠিক সময় ঘুমাতে যাওয়া, নিজের পোশাক বেছে নেওয়া বা বাইরে যাওয়ার আগে তৈরি হওয়া। আরও ছোট ছোট অনেক সিদ্ধান্ত।  

যখন আমরা শিশুর হয়ে সিদ্ধান্তগুলো নেই
আমাদের ধারনা হচ্ছে শিশুর অভিজ্ঞতা নাই তাই ওর সিদ্ধান্তগুলো আমাদেরকেই নিতে হবে। কিন্তু আমরা যেই অভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধান্ত নেই সেই অভিজ্ঞতা পেলে শিশুও একই রকম সিদ্ধান্ত নেয়, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের চেয়েও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কেননা মানুষ মাত্রই নিজের ভালো মন্দটা দ্রুত বুঝতে পারে। আর আমাদের নেওয়া সিদ্ধান্তে আমাদের মনে প্রশান্তি আনলেও শিশু বঞ্চিত হয় অভিজ্ঞতা থেকে যা তাকে আত্তনির্ভরশীল হওয়া থেকে বিরত রাখে। শিশু শিখে না কেন তার গরম কাপড় পড়তে হবে বা অন্যদের চেয়ে আগে ভাগে ঘুমাতে যাওয়া উচিৎ। কোনকিছু তাড়াতাড়ি করার জন্যও আমরা শিশুর কাজ নিজেরা করতে চাই কিন্তু ভুলে যাই তাকে কাজে দক্ষ হতে হলে যত অল্প বয়সে শুরু করবে ততো দুই পক্ষেরই সুবিধা। তাছাড়া অন্য শিশুদের চেয়ে তার পিছনে আমাদের বেশী সময় বা কাজ করে দিতে হয়, কিন্তু সারা জীবনতো আমরা এটা করতে পারবো না। চর্চা ও অভিজ্ঞতার অভাবে তার জীবনে ভুল সিদ্ধান্তের হারও তুলনামূলকভাবে বেশী হবে। 

শিশু যখন প্রতিদিন তার সিদ্ধান্তগুলো নেয়
এক্ষেত্রে শিশু তুলনামূলকভাবে বেশী বাস্তবতা দেখতে পায়, সে জানে কোন সিদ্ধান্তের পরিণতি কী। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে সাময়িক আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স) যা আমরা অনেকে হয়তো সারা জীবনেও শিখতে পারিনা। শিশু বুঝতে পারে বড়রা কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় ফলে শিশুর সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ে। তাছাড়া কোন কিছুতে চেষ্টা করে যাওয়ার যে সুফলতা শিশু তা ধীরে ধীরে বুঝতে শিখে। 

বাবুইটিপ 
প্রথমেই প্রয়োজন হবে আমাদের মানসিক প্রস্তুতি। ধৈর্যের সাথে শিশুর সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া। শিশুর বেছে নেওয়া পোশাক, খেলার ধরন বা অন্যান্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়তো আমাদের পছন্দ নাও হতে পারে তবে ভবিষ্যতের উন্নতির ভাবনা মাথায় রেখে অনেক কিছুই মেনে নিতে হবে, মনে রাখতে হবে আজকের শিশু ভিন্ন একটি সময় এবং অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বড় হবে যা আমাদের বেড়ে উঠার সময় এবং পরিবেশ থেকে আলাদা। সুতরাং শিশুকে তার মত করে খাপ খাওয়াতে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। 

দ্বিতীয়ত শিশুকে সব কিছুর আগে পরিণতির কথা বলুন, তাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কী কী বিষয় আমলে নিতে হবে তা প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিন। 
'তুমি যদি এখনই (ধরুন দুপুরের কথা) ঘুমাতে যাও তাহলে তুমি বেশিক্ষণ খেলার সময় পাচ্ছ, তা না হলে হয় তুমি ঠিক খেলার আগে ঘুমিয়ে যাবে নয়তো ক্লান্ত শরীরে খেলবে, ফলে খেলাটা তোমার ভালো লাগবে না। অথবা অন্যরা তোমার কাছ থেকে সহজেই বল নিয়ে নিবে।এখন তুমি বলো কী করবে।' 
'ইঙ্ক্রেটেবল হাল্কের মত সুপার হিরো হতে চাইলে আমাদের বেশী বেশী সবজি খেতেই হয়, কিন্তু তুমি যেহেতু ডেজার্ট বেশী পছন্দ করো এখন তুমিই ঠিক করো সপ্তাহের কোন দুই দিন তুমি মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবে। সিদ্ধান্ত তোমার।'        
'মা এই দশটা কাজ তোমার জন্য করে, তুমি বেছে নাও কোন কাজগুলো তুমি করবে।' 

* প্রথম কিছুদিন হয়তো শিশু সিদ্ধান্ত নিতে চাইবে না বা আপনার কথা বিশ্বাস নাও করতে পারে, তবে সারাদিনে যত বেশী সিদ্ধান্ত শিশু নিজে নিতে পারবে ততোই তার নিজের ক্ষমতার উপর আত্মবিশ্বাস জন্মাবে এবং এক সময় অন্যদের চেয়ে বেশী বিচক্ষণতার পরিচয় দিবে।